কেরল রাজ্যের রাজধানী শহর, তিরুবনন্তপূরমের ইষ্ট ফোর্টের ভিতরে ভগবান বিষ্ণুর প্রতি উৎসর্গীকৃত শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি অবস্থিত। কেরল এবং দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যশিল্পর সংমিশ্রণে মন্দিরটি গঠিত। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, এটি বিশ্বের সবথেক ধনী মন্দির।
শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটির ইতিহাস খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর। ভারতের দিব্য দেশমের ভগবান বিষ্ণুর 108 টি পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। দিব্য দেশম হল তামিল আরভারস(সাধু) রচিত গ্রন্থে ভগবান বিষ্ণুর পবিত্রতম বাসস্থান। এই মন্দিরের মূল দেবতা হলেন, ফনা তুলে থাকা অনন্তনাগের উপরে আঁধশোয়া অবস্থায় ভগবান বিষ্ণু।
ত্রাভাংকোর প্রসিদ্ধ রাজাদের মধ্যে অন্যতম মার্তন্ডা বর্মা এই মন্দিরটির প্রমুখ সংস্করণ করান এবং বর্তমান শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটির গঠন তারই ফলে হয়েছে। মার্তন্ডা বর্মা এই মন্দিরে মুরাজাপম এবং ভদ্রা দীপম উৎসবের প্রচলন করেন। মুরাজাপম কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল নিরবিচ্ছিন্ন স্তোত্র পাঠ, এটি এখনো প্রতি ছয়বছর অন্তর পালিত হয়।
1750 খৃষ্টাব্দে মার্তন্ডা বর্মা ত্রাভাংকর রাজ্যটিকে ভগবান পদ্মনাভর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। মার্তন্ডা বর্মা শপথ নেন যে, রাজপরিবার ভগবানের তরফে রাজ্যপাট পরিচালনা করবে এবং তিনি ও তাঁর উত্তরাধিকারীরা রাজ্যের সেবা করবে পদ্মনাভ দাস নামে অর্থাৎ ভগবান পদ্মনাভর দাস হিসেবে। তখন থেকে প্রতিটি ত্রিভাংকোর রাজার নামের আগে পদ্মনাভ দাস কথাটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পদ্মনাভস্বামীকে ত্রিভাংকোর রাজ্যের অনুদানকে ত্রিপদিদানম বলা হয়।
কেরলের রাজধানী শহর তিরুবানন্তপূরম নামটি গৃহীত হয়েছে শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবতার থেকে, যিনি অনন্ত নামেও খ্যাত ( যিনি অনন্ত নাগের উপরে অর্ধশায়িত) । তিরুবানন্তপূরম কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ভগবান অনন্ত পদ্মনাভস্বামী।
বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি যেখানে অবস্থিত সেটি সপ্ত পরশুরাম ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম একটি। এই মন্দিরটির উল্লেখ পুরাণে পাওয়া যায়, যেমন, স্কন্দ পুরাণ ও পদ্ম পুরাণ। মন্দিরটি পবিত্র পুকুর পদ্ম তীর্থম, যার অর্থ হল ‘পদ্ম ঝরনা’র পাশে অবস্থিত।
বর্তমানে মন্দিরটি ত্রাভাংকোরের রাজপরিবারের নেতৃত্বে একটি অছিপরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়।
শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবমুর্তিটি এর গঠন শৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে 12008 টি শালগ্রাম শিলা, যেগুলি নেপালের গন্ডকী নদীর তীর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। শ্রীপদ্মনাভীস্বামী মন্দিরের গর্ভগৃহ বা পবিত্র বেদী একটি পাথরে স্ল্যাব দিয়ে তৈরি যার উপরে 18 ফুট দৈর্ঘ্যের মূল দেবমূর্তিটি রয়েছে এবং মুর্তিটিকে তিনটি বিভিন্ন দরজা দিইয়ে দর্শন করা যেতে পারে। মস্তক এবং বক্ষ প্রথম দরজা দিয়ে, হস্তগুলি দ্বিতীয় দরজা দিয়ে এবং পদযুগল তৃতীয় দরজা দিয়ে দর্শন করা যায়।
নান্দনিকতা এবং স্থাপত্যমন্দিরের স্থাপত্য পাথর এবং ব্রোঞ্জের কর্মের উপরে প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের ভিতরের অংশে স্থান নিয়েছে সুন্দর চিত্রকর্ম এবং ম্যুরাল। যার মধ্যে কিয়দংশ হল অর্ধশায়িত অবস্থায় ভগবান বিষ্ণুর পূর্ণ দৈর্ঘ্যের মুর্তি, নরসিংহ স্বামী ( অর্ধেক সিংহ, অর্ধেক মানুষরূপী ভগবান বিষ্ণু অবতার), গনপতি দেব এবং গজলক্ষ্মী দেবী। মন্দিরের 80 ফুট উচ্চতার ধ্বজ স্তম্ভটি ( পতাকা দন্ড) সোনার জল করা রূপোর পাত দিয়ে মোড়া। এই মন্দিরের আরও কয়েকটি গঠন বৈশিষ্ট রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে বালি পীডা মন্ডপম এবং মুখ মন্ডপম। এগুলি হল বিভিন্ন সুন্দর স্থাপত্য এবং বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর মুর্তিদিয়ে কারুকার্য করা হল-ঘর। আরেকটি আকর্ষক স্থাপত্য হল নবগ্রহ মন্ডপ। যার ভিতরের ছাদে নবগ্রহের(নয়টি গ্রহ) ছবি প্রদর্শিত আছে।
করিডর/বারান্দাপূর্বদিক থেকে পবিত্রবেদী অবধি একটি বিস্তৃত চড়া বারান্দা প্রসারিত , যার মধ্যে 365 এবং এক-চতুর্থাংশ সুন্দর পাথর-খোদাই করা স্থাপত্য সহ গ্রানাইট পাথরের থাম রয়েছে। পূর্বদিকের মূল প্রবেশ দ্বারের নীচে একটি গ্রাউন্ড ফ্লোর রয়েছে , যেটি নাটক শালা( প্রাথমিক ভাবে নাট্যমঞ্চ বলা হয়) নামে পরিচিত এবং এখানে মালয়লাম মীনম এবং তুলম মাসে অনুষ্ঠিত দশদিন ব্যাপী বাৎসরিক উৎসবে কেরলের শাস্ত্রীয় নৃত্য-কথাকলি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শ্রীপদ্মনাভ স্বামী মন্দিরে পূজোর সময়সকাল: ভোর 3:30 মিনিট থেকে 4:45 মিনিট (নির্মাল্য দর্শনম) ভোর 6:30 মিনিট থেকে 7:00 মিনিট ভোর 8:30 মিনিট থেকে 10:00 মিনিট ভোর 10:30 মিনিট থেকে 11:10 মিনিট ভোর 11:45 মিনিট থেকে 12:00 মিনিট সন্ধ্যায়: 5:00 থেকে 6:15 মিনিট 6:15 মিনিট থেকে 7:20 মিনিট
উৎসবের সময়ে মন্দিরের পূজোর সময় পরিবর্তীত হয়।
মন্দিরে পোশাক আচরণ বিধি রয়েছেশুধুমাত্র হিন্দুদেরই মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশাধিকার রয়েছে। মন্দিরে প্রবেশের সময় পোশাক পরিধানে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। পুরুষদের পোশাক হল মুন্ডু বা ধুতি( কোমড় থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত্য লম্বা) এবং কোন প্রকারের শার্ট পরা চলবে না। মহিলাদের পরিধেয় হল, শাড়ি, মুন্ডুম নেরিয়াতুম (সেট-মুন্ডু) স্কার্ট ও ব্লাউজ বা হাফ শাড়ি। মন্দিরে ঢোকার মুহুর্তে ভাড়ায় ধুতি পাওয়া যায়। আজকাল ভক্তদের সুবিধার্থে মন্দির কর্তৃপক্ষ প্যান্ট বা চুড়িদারের উপরে ধুতি পড়ার অনুমতি দিয়েছে। আরো বিস্তারিত জানার জন্য লগ করুনঃ www.sreepadmanabhaswamytemple.org
যাবার জন্যনিকটতম রেলস্টেশন: থিরুবনন্তপূরম সেন্ট্রাল, প্রায় 1 কিমি দূরে। সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট: তিরুবনান্থপুরম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, প্রায় 6 কিমি দূরে।
ভৌগলক অবস্থানঅক্ষাংশ : 8.483026, দ্রাঘিমাংশ : 76.943563
ম্যাপডিপার্টমেন্ট অব ট্যুরিজম, গভর্মেন্ট অব কেরল, পার্ক ভিউ, কেরল, ইন্ডিয়া- 695033
ফোনঃ +91 471 2321132, ফ্যাক্সঃ + 91 471 2322279, ইমেল: info@keralatourism.org.
সমস্ত স্বত্ব © কেরল পর্যটন 2020. কপি রাইট | ব্যবহারের নিয়ম | কুকি নীতি | যোগাযোগ করুন
আই এন ভি আই এস মাল্টিমিডিয়া দ্বারা বিকাশকৃত এবং রক্ষিত।